অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় জেনে নিন

Lajuk 🤍

14 Aug, 2024

অ্যালার্জি মূলত একটি ইংরেজি শব্দ এর বাংলা অর্থ হলো অতিপ্রতিক্রিয়া। আমাদের পরিবেশে এমন কিছু কিছু বস্তু আছে যাদের উপস্থিতির কারণে মানুষের শরীরে প্রতিরক্ষাতন্ত্রের অতিসংবেদনশীলতার ফলে বিরুপ প্রক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

অ্যালার্জি অনেক রকম হতে পারে এবং এক এক ব্যাক্তির শরীরে এক এক রকম ভাবে তা প্রকাশ পায়। অ্যালার্জির উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই ত্বকের অ্যালার্জি, খাবারে অ্যালার্জি বা কোনো খাবার সহ্য না হওয়া, হাঁপানি, রাইনোরিয়া বা নাক দিয়ে অনবরত পানি পরা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চুলকানিযুক্ত ফু্সকুড়ি এবং শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ- অ্যালার্জি হওয়ার কারণ সংক্রান্ত সব কিছু

অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তা জানুন
অ্যালার্জি স্কিনে হওয়ার কারণ
অ্যালার্জি রক্তে থাকলে কি করণীয়
অ্যালার্জি হলে যেসব খাবার খাওয়াতে সতর্ক থাকতে হবে
অ্যালার্জি হলে শরীরে কি কি সমস্যা হয়
অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যখন মারাত্মক হয় তখন করণীয়
অ্যালার্জির চিকিৎসা ঘরোয়া উপায়ে
অ্যালার্জি হলে যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
অ্যালার্জি চোখে হলে যেসব কাজ করা উচিত
অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তা সম্পর্কে লেখকের শেষ কথা

অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তা জানুন

অ্যালার্জি মূলত যেসব কারণে হয় তা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। তারপরে ও এমন অজানা অনেক তথ্য আছে যেগুলোর সম্পর্কে আমরা অবগত নই। ফুলের রেণু ও কিছু কিছু খাবার খুব সাধারণ অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উৎপাদক এছাড়া ধাতব সহ অন্যান্য বস্তুও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কীটপতঙ্গের হুল ও ঔষধ মানুষের শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে থাকে। এতে করে মানুষের শরীরে অস্বস্তিবোধ হয় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বালা পোড়ার সৃষ্টি হয়

শরীরে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনকারী ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ই নামক একটি অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডির এক অংশ অ্যালার্জির উৎপাদক বস্তুর সাথে এবং অপর অংশ ক্ষারাকর্ষী শ্বেতকণিকার বেসোফিল রিসেপ্টরের সাথে বন্ধন তৈরী করে। এর ফলে কোষগুলো থেকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ যেমনঃ হিস্টামিন বের হয়। এবং ঠিক এইসব কারণ সমূহের জন্য অতিপ্রতিক্রিয়ার প্রভাব মানুষের শরীরে লক্ষ করা যায়।

আমরা রোগ নির্ণয় মূলত রোগের ইতিহাসের মাধ্যমে করে থাকি। এছাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ত্বকের ও রক্তের পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়। কখনো কোনো ব্যক্তির শরীরে অ্যালার্জি হলে আমরা তার লক্ষণ দেখে বুঝতে সক্ষম হই কিন্তু অ্যালার্জি যখন মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায় তখন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন পরে। কোনো ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট বস্তুর উপর সংবেদনশীলতার পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলেও ওই ব্যক্তির যে উক্ত বস্তুটির উপর অ্যালার্জি আছে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায় না।

অ্যালার্জি স্কিনে হওয়ার কারণ

অ্যালার্জি স্কিনে হওয়া বিষয়টিকে আমরা সাধারণত একজিমা বলে থাকি। যে সকল পদার্থ ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে ফোলাভাব, চুলকানি, ফুসকুড়ি জাতীয় প্রদাহের সৃষ্টি করে তাদেরকে আমরা অ্যালার্জির উৎপাদক হিসেবেই চিনি। এই পদার্থ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো লাটেক্স।

বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ডিটারজেন্ট, ধুলাবালি, পশুপাখির মলমুত্রের সংস্পর্শে এলে মানুষের ত্বক অনেক ক্ষেত্রে লাল হয়ে যায়। শুস্ক হয়ে পরে আবার কখনো কখনো ফেটে যায় এবং চুলকায়।আমাদের ত্বকের সাধারণ অ্যালার্জিক রোগ গুলো হলোঃ একজিমা, আরটিকেরিয়া,কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস, অ্যানজিওইডিমা ইত্যাদি।

এলজিমাঃ একজিমা সাধারণত মানুষের শরীরে শিশু বয়স থেকেই শুরু হতে পারে। একজিমা হলে শরীরের বিভিন্ন স্থান চুলকায়, ফেটে যায় এর ফলে শরীরে অস্বস্তিবোধ হয়।

আরটিকেরিয়াঃ আরটিকেরিয়া কে হাইভস ও বলা হয়। মানুষের শরীরে সাধারণত কোনো খাবার, ঔষধ, বা কীটপতঙ্গের কামড়ের ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় লাল লাল হয়ে ফুলে যায় এবং প্রচন্ড চুলকায়।

আরো পড়ুনঃ ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের মাধ্যমে টাকা আয় করার টিপস

কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসঃ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখি ধুলাবালি, প্রাণীর লোম, রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত ক্রিম, উল বা কৃ্ত্রিম তন্তুর কোনো কাপড়, কোনো উদ্ভিদ, নিকেলের গহনা, লোশন বা সাবান এর সংস্পর্শে কেউ আসলে তার শরীরে জ্বালা করে, জায়জায় জায়গায় ফুলে উঠে এবং লাল হয়ে যায়। এটি সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসার ফলে সৃষ্টি হয় বলে এটাকে কন্ট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস বলে।

অ্যানজিওইডিমাঃ মানুষের ত্বকের গভীরের অংশে প্রদাহ সৃষ্টি হয় বলে এটাকে অ্যানজিওইডিমা বলে। অনেক সময় আরটিকেরিয়া হিসেবে শুরু হয়ে অ্যানজিওইডিমা তে রূপ নিতে পারে এটি। এটিকে অবহেলা করলে অনেক সময় দেখা যায় এটি গুরুতর রূপ নেয়। অ্যানজিওইডিমা ফলে মানুষের মুখ ফুলে যায়।

অ্যালার্জি রক্তে থাকলে কি করণীয়

অ্যালার্জি যে রক্তেও হয় এই বিষয়টি হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। রক্তের লোহিত কনিকা, শ্বেত রক্ত কণিকার মত অস্থিমজ্জা এবং ইসিনোফিল থেকে অ্যালার্জি উৎপন্ন হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণু কিংবা পরজীবীদের মেরে ফেলে। এরা সাইটো কাইনেজ ও সাইটো টক্সিস অণুর নিঃসরণ এর মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকে।

রক্তে অ্যালার্জি কমানোর জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে যে আমাদের রক্তে আসলে এলার্জি আছে কিনা। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ করে ধুলো বালি পরিষ্কার করতে হাঁচি শুরু যায় এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হতে থাকে। এছাড়াও দেখা যায় আপনি কোন ফুলের সুগন্ধ নিচ্ছেন কিংবা গরুর মাংস চিংড়ি মাছ খাচ্ছেন, ইলিশ মাছ, গরুর দুধ খাচ্ছেন হঠাৎ করে আপনার শরীরের চুলকানি অথবা চামড়ায় লাল লাল চাকা বর্ণ হয়ে ফুলে উঠেছে। এইসব লক্ষণ দেখা দিলেই বুঝে নিতে হবে যে আপনার অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে।

প্রথমত আপনার যেসব কারণে অ্যালার্জি হয় সনাক্ত করতে হবে। দ্বিতীয়ত আপনাকে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালার্জি হতে পারে এমন জিনিসপত্র এড়িয়ে চলা এবং ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি অ্যালার্জির জন্য ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। শরীরের কোন জায়গায় চুলকানি হলে আমাদেরকে বড় বড় নখ দিয়ে এগুলো চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে এতে করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাকটেরিয়া গুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং সেখানেও চুলকানি হতে থাকে।

অ্যালার্জি হলে যেসব খাবার খাওয়াতে সতর্ক থাকতে হবে

অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তা প্রথমত আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। অ্যালার্জি হলে কিছু কিছু খাবার খাওয়াতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সচরাচর যেসব খাবারে অ্যালার্জি হতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে চিংড়ি মাছ, বেগুন, ইলিশ মাছ গরুর মাংস, বাদাম ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রে ডিম এবং দুধেও অ্যালার্জি দেখা যায়।

অ্যালার্জি-হলে-যেসব-খাবারে-সতর্ক-থাকতে-হবে

খাদ্যভেদে এক এক মানুষের এক এক খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই কোন খাবার খেলে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সে বিষয়ে আমাদেরকে প্রথমত দৃষ্টিপাত করতে হবে। এটি খুঁজে বের করতে পারলে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। অ্যালার্জি হয় এমন খাবার খাওয়ার ফলে দেখা যাচ্ছে শরীরে অ্যালার্জি প্রভাবটা অনেক বেশি বেড়ে যায়।

এবার আমরা আলোচনা করব যেসব খাবার খেলে আমরা আমাদের শরীরের অ্যালার্জির প্রভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। আমরা অনেকেই হয়তো জেনে থাকবো যে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে অ্যালার্জির প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় পেঁয়াজ, আপেল, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আঙ্গুর এগুলো হলো কুয়ারসেটিন গ্রুপের খাবার। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এসব খাবারে অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি কেমিক্যাল থাকায় এসব খাবার অ্যালার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

লেবু, কমলালেবু সহ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে বেশি বেশি। এসব খাবারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছ,তেল, প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই, টক দই যা শরীরের অন্ত্রকে উন্নত করে অ্যালার্জি প্রতিকার ও প্রতিরোধে সাহায্য করে এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হলুদ, আনারস অ্যালার্জির প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ইনফ্লামেশন কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

অ্যালার্জি হলে শরীরে কি কি সমস্যা হয়

শরীরে অ্যালার্জি হলে আমরা বিভিন্ন রকম লক্ষণ দেখতে পাই। অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো চামড়ায় চুলকানি, র‍্যাস বা ফুসকুড়ি হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া। অ্যালার্জি হলে মানুষের শরীরে অসম্ভব রকমের চুলকানি অনুভূত হয় যার ফলে অস্বস্তি বোধ হয়।

এছাড়াও এলার্জি হলে আমরা দেখতে পাই ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যায় আবার চোখে চুলকানি অনুভূত হয়। চোখের অ্যালার্জিতে আমরা দেখতে পাই অনেক ক্ষেত্রে চোখ থেকে পানি পড়ে, চোখ লাল হয়ে যায় এবং চোখ ফুলে যায়। আবার অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারণে অনেকের সর্দি ও কাশি হয়ে থাকে। শুকনো কাশি, গলা খুস খুস করা, বার বার হাঁচি পরতে থাকা, নাক দিয়ে অনবরত পানি পরতে থাকা এই লক্ষণ গুলো কোনো মানুষের শরীরে দেখা দিলে তার অ্যালার্জি হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হই।

এছাড়াও অ্যালার্জি জনিত লক্ষণ সময়ের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা, শ্বাস নেওয়ার সময় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া, বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া। আমরা শুরুতেই জেনেছি যে অ্যালার্জির বহিঃপ্রকাশ এক এক মানুষের শরীরে এক এক রকম ভাবে হয়ে থাকে সাধারণত উপরের এই সমস্যা গুলো কোন মানুষের মধ্যে দেখা গেলে আমরা ধরে নেই যে তার অ্যালার্জি হয়েছে এক্ষেত্রে আমরা দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যখন মারাত্মক হয় তখন করণীয়

অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হওয়ার আগে আমাদের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেকোনো রোগী প্রাথমিক অবস্থায় ভালোমতো চিকিৎসা করার ফলে চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব। অবহেলার ফলে যে কোন রোগে মারাত্মক রোগ ধারণ করতে পারে অ্যালার্জির উপাদানের প্রতি তীব্র প্রতিক্রিয়া থেকে খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে অ্যানাফিল্যাক্সিস নামক একটি জরুরী ব্যবস্থা তৈরি হতে পারে।

এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রোগীর মৃত্যু ও পর্যন্ত হতে পারে এমন রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। সময় মতো একটি ইনজেকশন দিলে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব। অ্যানাফিল্যাক্সিস হচ্ছে কিনা তা আপনার কিভাবে বুঝবেন তা নিয়ে এখন আলোচনা করব। অ্যানাফিল্যাক্সিস জাতীয় সমস্যার প্রভাব দেখা দিলে আমাদেরকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

অ্যানাফিল্যাক্সিসের ফলে শ্বাসকষ্ট অথবা শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হয়। মুখ, জিব্বা ঠোঁট অথবা গলা ফুলে যায়। ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যাওয়া আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগীর জ্ঞান হারানোর এর মত অনুভূতি হয় অথবা রোগী পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যায়। বুক এবং গলা আঁটসাঁট হয়ে আসে বা আটকে আসছে বলে মনে হয়। অনেক সময় রোগীর মাথা ঘোরানো অথবা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারে। বুক ধরফর করা কিংবা শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া। এছাড়াও বিভ্রান্ত ও দুশ্চিন্তা হচ্ছে অ্যানাফিল্যাক্সিসের লক্ষণ।

অ্যালার্জির চিকিৎসা ঘরোয়া উপায়ে

অ্যালার্জির চিকিৎসা আমরা ঘরেও করতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু টিপস এবং ট্রিকস ফলো করতে হতে পারে। প্রথমত অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় এবং যেসব খাবার, ঔষধে অ্যালার্জি হয় সেগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। হাঁপানি অথবা শ্বাসনালীর অন্য কোন রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। আমাদেরকে আমাদের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করতে হবে। প্রথমে আমরা জানি আমরা ঘরোয়া কি কি উপাদান দিয়ে অ্যালার্জি সমস্যার সমাধান করতে পারি।

টি-ট্রি অয়েল, আপেল সিডার ভিনেগার, নারিকেল তেল, অ্যালোভেরা জেল,কোল্ড সাওয়ার, লবণ পানি, ঠান্ডা পানি আমলকি ও মধু এগুলো হল ঘরোয়া কিছু উপাদান যা আমাদের সকলের বাড়িতেই থাকে। টি-ট্রি অয়েল ত্বকের অ্যালার্জিতে দারুন ভাবে কাজ করে। টি-ট্রি অয়েলে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবাল ও আন্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি দেয়। আপেল সিডার ভিনেগার ও অ্যালার্জি কমাতে খুব সুন্দর ভূমিকা পালন করে।

আপেল সিডার ভিনেগার এ আছে অ্যাসিটিক এসিড যা ত্বকের চুলকানি কমিয়ে অ্যালার্জি প্রকোপ দূর করতে কাজ করে এই উপাদান। তবে আমাদেরকে আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করার আগে দেখে নিতে হবে যে এতে আমাদের অ্যালার্জি আছে কিনা এবং তার ব্যবহার করা যাবে কিনা। ত্বকের অ্যালার্জি কমাতে নারিকেল তেলের ভূমিকা ও অনেক বেশি।

নারিকেল তেলে রয়েছে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান যা অ্যালার্জি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দেয় শুধু তাই নয় নারকেল তেল অ্যালার্জি জনিত চুলকানি কমায়। এক্ষেত্রে আমরা করতে পারি সামান্য একটু নারিকেল তেল একটি বাটিতে নিয়ে কুসুম গরম করে অ্যালার্জি জনিত স্থানে লাগান ১ ঘন্টা রেখে দিন উপকার পেলে দিনে সেখানে আপনি দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যালোভেরা জেল ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সেরা উপায় বলে অনেকে মনে করেন। এটি ত্বকে জ্বালাপোড়া চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়। সতেজ অ্যালোভেরা জেল ত্বকে সরাসরি লাগালে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়াও কোল্ড সাওয়ার যেটা ত্বকের জ্বালা ও অ্যালার্জি হ্রাস করতে সহায়তা করে। কোল্ড সাওয়ার বলতে আমরা সাধারণত বুঝি একটি শীতল ঝর্ণা যা আপনার রক্তনালী গুলো সংকুচিত করতে সহায়তা করে এবং হিস্টামিন বেরোতে দেয় না।

অ্যালার্জি হলে যখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

অ্যালার্জি হলে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা অনেকেই ঘরোয়া উপায়ে চিকিৎসা করে অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারি। কিন্তু অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া যদি মারাত্মক হয় আমাদের তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ যে কোনো রোগের চিকিৎসা করতে আমরা যদি অবহেলা করি তা মারাত্মক রূপ নিতে পারে। এলার্জিজনিত সমস্যার ঔষধ খাওয়ার পরে ও লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আমাদের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। আবার যদি ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খাওয়ার পর নতুন লক্ষণ দেখা দেয় কিংবা সমস্যা বেড়ে যায় তখন আবারও ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।

অ্যালার্জির চিকিৎসায় সাধারণত অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এগুলো অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এমনকি লক্ষণ দেখা দেওয়ার পূর্বেও সেবন করা যায়। যেমন ধরুন কারো যদি ধুলাবালিতে এলার্জি থাকে এবং বিশেষ প্রয়োজনের তার ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয় সে ক্ষেত্রে আগেই অ্যান্টি হিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করা যায়।

আন্টি হিসটামিন জাতীয় ঔষধ বিভিন্ন রূপে আমরা মেডিসিনের দোকানগুলোতে পেয়ে থাকি যেমন ট্যাবলেট, সিরাপ ও ড্রপ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় অ্যালার্জি কিছু ঔষধ সেবনের পরে ঘুম ঘুম লাগে, মাথা ঝিমঝিম করার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তাই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আমাদের উচিত উপযুক্ত ঔষধটি বেছে নেওয়া।

অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারণে অনেকের নাক বন্ধ হয়ে যায় তাই আমাদের উচিত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নাকের ড্রপ ও স্প্রে ব্যবহার করা। ড্রপ ও স্প্রে গুলো এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ব্যবহার করবেন না। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারের ফলে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা আবার ফিরে আসতে পারে। ত্বকের এলার্জিতে বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ও মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ও ১ % মেন্থল ক্রিম খুবই ভালো কাজ করে। অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া প্রবল হলে আমরা যেটাই ব্যবহার করি না কেন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া টা খুবই জরুরী।

অ্যালার্জি চোখে হলে যেসব কাজ করা উচিত

অ্যালার্জি চোখে হলে অনেক সময় দেখা যায় চোখ লাল হয়ে যায়, চোখ চুলকায় এবং অনবরত পানি পরে। ঠান্ডা জনিত কারণেও অনেক সময় চোখের অ্যালার্জি হতে পারে। এমন হলে বৃষ্টিতে ভেজা ও পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বাসায় গোসল করার সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে।

অ্যালার্জি চোখে হলে আমরা ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি ও অবলম্বন করতে পারি। চোখের অ্যালার্জিতে লবণ পানি মধু ইত্যাদিতে উপকার মিলতে পারে।এছাড়াও গোলাপজল চোখের অ্যালার্জিতে একটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। গোলাপজল চোখের অ্যালার্জির প্রিভেনটিভ হিসেবে কাজ করে।

চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে দুই থেকে তিন ফোটা গোলাপজল চোখে দিয়ে দিন। এতে যে ইনফেকশনের কারণে চোখ অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়েছে সেটি কেটে যায়। গোলাপজল দেওয়ার পর চোখ কিছুক্ষণ বন্ধ রাখুন খোলা থাকলে তরলটি বেরিয়ে যেতে পারে এবং তখন এটি পুরোপুরি কাজ করবে না। গোলাপজল চোখের জ্বালাপোড়া এবং চোখের চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ- বিষাক্ত সাপ কামড়ালে করণীয় কাজ

লবণ পানি ও চোখের অ্যালার্জি কমাতে ভালো কাজে দেয় প্রথমে এক গ্লাস পানি নিয়ে এতে তিন চা চামচ লবণ ভালোমতো মিশিয়ে তার ফোটান। ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই পানিতে এক টুকরো পরিষ্কার তুলো ভিজিয়ে চোখ ধীরে ধীরে মুছে ফেলুন। এতে করে চোখে থাকা ময়লা বেরিয়ে যাবে এবং চোখের চুলকানি ও জ্বালাপোড়া কমে যাবে এবং আরাম মিলবে।

আমরা সকলেই জানি পানির অপর নাম জীবন। তেমনই চোখের অ্যালার্জি কমাতে পানির ভূমিকা অতুলনীয়। চোখের অ্যালার্জি কমাতে বার বার ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলে চোখের ফোলা ও লাল ভাব কমে যায় এবং যন্ত্রণার উপশম হয়। এছাড়াও আমলকি ও মধু এলার্জির উপশম কমাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে।

প্রতিদিন রাতে আমলকি পাউডারের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এবং শরীর অ্যালার্জিমুক্ত রাখবে। পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এটি ঠান্ডার জনিত অ্যালার্জি দূর করতে সহায়তা করে পেয়ারার পাশাপাশি লেবুর শরবত বা লেবু চা খেলে উপকার পেতে পারেন। এছাড়াও আদা দিয়ে চা বানিয়ে তার সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

অ্যালার্জি যেসব কারণে হয় তা সম্পর্কে লেখকের শেষ কথা

আমার মতে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা প্রায় মানুষেরই হয়ে থাকে তবে তাদের প্রকৃতিটা আলাদা আলাদা হতে পারে। আমার এই আর্টিকেলটিতে আমি যথা সম্ভব আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনারা অ্যালার্জি যেসব কারণে হয়, এর মারাত্মক প্রতিক্রিয়া, এর প্রকৃতি এবং এটি থেকে নিস্পত্তি পাওয়ার বেশ কিছু ধারণা পেয়েছেন।

আপাদের যদি এই বিষয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকে বা কোনো মন্তব্য থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না। অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাত সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবং প্রাথমিক ভাবে এটি নির্মূল করার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে নিকটস্থ কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ধন্যবাদ